পীরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা ।
মানবজীবনের শিক্ষার আতুর ঘর বলা হয়ে থাকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে । কিন্তু যথাযথ তদারকি ও দেখভালের অভাবে ভেঙ্গে পড়েছে এই শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে মান উন্নত করতে হলে সবার আগে শিক্ষকদের সামর্থ্য, দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিশ্চিত করতে হবে। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জোতবাজ গ্রামের নিভূত পল্লীতে “জোতবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৩ সালের ৯ই জানুয়ারীতে ২য় ধাপে সরকারিকরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক গোপাল চন্দ্র বর্মণ ও গোলাম কিবরিয়া, আঞ্জুমান আরা রানু, উম্মে হাবিবা মোছাঃ ইসমোত আরা নাজমিন ও শিরিনা পারভীনকে সহকারি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জমজমাট পড়ালেখার পরিবেশ ছিলো প্রতিষ্ঠানটিতে। সম্প্রতি সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নানাবিধ কর্মকান্ড নিয়ে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়- প্রতিষ্ঠান সরকারি করণের পূর্বে এখানে পড়ালেখার ভালো পরিবেশ ছিলো এবং শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর জন্য বাবা-মায়েরা ছুটে আসত কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে শিক্ষার মান এমন হয়েছে যে কোন বাবা-মা আর তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করাতে চান না। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন- কোন প্রকার ক্লাশ হয় না শিক্ষকরা তাদের নিজের ই”েছমত আসেন আবার চলে যান। ক্লাশ নেওয়ার ইচ্ছে হলে ক্লাশ নেন না হলে নেন না। এমন সময় নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন বলেন- প্রধানশিক্ষক বাবুও নিয়মিত আসেন না আবার রানু নামের এক আপা ১২টার সময় এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। তিনি আরোও বলেন- রানুর বাবা এই প্রতিষ্ঠান গড়তে জমি দান করছেন বিধায় তিনি নিজের খেয়াল খুশিমত প্রতিষ্ঠানে আসেন তোয়াক্কা করেন না প্রধানশিক্ষকেও। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন- আমাদের নিয়মিত ক্লাশ হয়না,ক্লাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেঞ্চের সমস্যা ফলে বসার অসুুবিধা এবং কেউ কেউ বলেন-শিক্ষকরা আমাদের ক্লাশ করান না এবং আমরা স্কুলে আসি মাঠে খেলি আর ২-১টা ক্লাশ করে ছুটি দিলে বাড়ি যাই। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান গোপাল চন্দ্রের সাথে কথা বলে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য- ৯ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানে অনুপ¯ি’ত উম্মে হাবিবা ইসমোত আরা নাজমিন নামে সহকারি শিক্ষিকা। প্রধানশিক্ষকের যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- প্রতিষ্ঠান থেকে আমার বাসা অনেক দূরে এছাড়া অফিসিয়াল কাজে আমাকে শিক্ষা অফিসে যেতে হয় তাই যথাসময়ে উপস্হথিত হওয়া সম্ভব হয় না। তবে তিনি প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানে আসেন বলে দাবী করেন। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি শামীম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ইসমোত আরা নামে শিক্ষিকাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসার জন্যে আমরা শিক্ষা অফিসে আবেদন করেছি। তিনি বর্তমানে বালুয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন । কিন্এই প্রতিষ্ঠানের পদটি ছেড়ে না দেওয়ার কারণে শিক্ষক সংকট রয়েছে।যদি তিনি এখানে পদটি ছেড়ে দেন তাহলে নতুন শিক্ষক পাওয়া যাবে। আমাদের ৫জন শিক্ষকের মধ্যে শিরিনা খাতুন নামে ১ বছরের পিটিআই প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে আছেন। রানু নামে শিক্ষিকার বিষয়ে তিনি বলেন-আমি তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। সহকারী শিক্ষা কর্মকতা আবু জাহের মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান- এ বিষয়ে আমার কোন কিছু করার তার কোন ক্ষমতা নেই, তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে রীতিমত তিনি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে-তিনি মুঠোফোন গ্রহণ করেননি বিধায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে জোতবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন এলাকাবাসী।